নিউজ ডেস্ক::
বদলে যাচ্ছে বিয়ের পাত্র-পাত্রী খোঁজার আদিরীতি। ঘটকের বদলে প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন পাত্র-পাত্রী খুঁজে নেয়া যায়, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলে, মেয়েরা নিজেরাই তাদের পছন্দের পাত্র-পাত্রী খুঁজে নিচ্ছেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নীপা। থাকেন রাজধানীতে। বেশ কিছু দিন থেকেই তার পরিবার বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছিল। কিন্তু যে কয়টা পাত্র ইতিমধ্যে দেখা হয়েছে তাদের কাউকেই পছন্দ হয়নি নীপার। একপর্যায়ে ফেসবুকে ‘ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট’-এর অনলাইনভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখে কয়েকটি সাইটে নিজের পাত্র নিজেই খুঁজতে থাকেন। সেখানে বেশ ক’জন পাত্রের ছবি ও বায়োডাটা দেখে অবশেষে খুঁজে পান আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফকে। পরে দুজনের পরিচয় ও দেখাদেখি হয়। একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে আলোচনার মাধ্যমেই বিয়ে হয় নীপা ও আরিফের। একই অবস্থা রুমা এবং রায়হানের। দুজনই দুটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা। পারিবারিকভাবে বিয়ের আলোচনা হয়ে থাকলেও নিজেদের মনমতো পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। পরে ম্যাট্রেমনিয়ল সাইটে ইন করেন। খুঁজতে থাকেন পছন্দের জীবনসঙ্গীকে। একপর্যায়ে ওই সাইটের মাধ্যমে রুমা ও রায়হানের পরিচয় ও দেখা পর্ব হয়। বিয়ের আলোচনাটা তাদের পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। পরে ধুমধাম করে দুজনের বিয়েও হয়। রুমা জানান, পরিবার থেকে অনেক ছেলে দেখা হয়েছে। কিন্তু আমার মনমতো হয়নি। আমি ফেসবুক চালাতাম। প্রায়ই দেখতাম ডিসপ্লেতে পাত্র-পাত্রী খোঁজার বিভিন্ন সাইট আসতো। তবে এতটা গুরুত্ব দিতাম না। একদিন কিছুটা মজা করেই একটি সাইটে ইন করি। অনেকক্ষণ ওই সাইটটি দেখার পর বিশ্বাস আসে। পরে এক সময় খুঁজে পাই রায়হানের প্রোফাইল। রুমা বলেন, এমনিতে ঘটক ধরে পাত্রপাত্রী খোঁজা খুবই ঝক্কি-ঝামেলা। সেই তুলনায় এখন ঘরে বসে খুব সহজভাবে এর সমাধান করা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রযুক্তির এই যুগে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খুঁজে বের করার জনপ্রিয় ও কার্যকর এক মাধ্যম ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পাত্র-পাত্রী খুঁজে বের করার ডাটাবেজ অ্যাপ্লিকেশন। নীপা-আরিফ, রুমা-রায়হান দম্পতির মতো এখন অনেকেই বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অনলাইনভিত্তিক এই সেবার সাহায্য নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিবাহযোগ্য পাত্র-পাত্রী ও অভিভাবকদের সময় সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে বর-কনের একে অপরকে পছন্দ হওয়া এবং পাত্র-পাত্রীর জীবনবৃত্তান্তসহ সরাসরি একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সুযোগ ঘটছে।
জানা গেছে, উন্নত দেশ এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাত্র-পাত্রীর খুঁজ বের করার জন্য অনলাইনভিত্তিক এই সেবা এখন খুব জনপ্রিয়। আর এই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোর কর্মপরিধি বাড়ছে। বাংলাদেশে পরিচিত সাইটগুলো হচ্ছে বিয়েটা ডটকম, বিবাহবিডি, বরবধূ ডটকম, বাংলা ম্যাট্রিমনি ডটকম, সেনসিবল ম্যাচ ডটকম, ম্যারি বিডি, বিডি ম্যারেজ ডটকমসহ আরো বেশ কিছু ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট থেকে এখন সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকরা। ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোতে সাধারণত হাজার হাজার পাত্র-পাত্রীর ভেরিফাইড প্রোফাইল থাকে। এতে একজন পাত্র বা পাত্রীর জন্য তার পছন্দ মতো পাত্র বা পাত্রী খুঁজে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সাইটগুলোতে একজন ব্যবহারকারী সাধারণত বিনামূল্যে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অ্যাকাউন্টে ব্যবহারকারী তার ছবিসহ নাম, বয়স, উচ্চতা, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিজ জেলা, পেশা, আগ্রহ ও পারিবারিক সদস্যদের বর্ণনা তুলে ধরেন। এছাড়া কিছু সাইটে পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অন্যের তথ্য জানার সুযোগ দেয়া হয়। আবার কিছু সাইট বিনামূল্যেই অন্যদের তথ্য ও জানা ও দেখার সুযোগ করে দেয়। আবার পছন্দ হলে ম্যাট্রিমনিয়ল কোম্পানিগুলো পাত্র-পাত্রীদের সরাসরি দেখা সাক্ষাতেরও ব্যবস্থা করে দেয়। তবে, এজন্য সার্ভিস চার্জ রাখা হয় সামান্যই। বাংলাদেশে ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে ২০১২ সালের দিকে। তবে, প্রথমদিকে এই সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ সংগ্রহে সমস্যা ছিল। দেশের বাইরে থেকে এই চার্জ নেয়া হয় পেপলের সাহায্যে। তবে বর্তমানে বিকাশ, অনলাইন ব্যাংকিংভিত্তিক বিভিন্ন সুবিধার কারণে এই সেবা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। আর দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী হচ্ছেন। শুধু পাত্র-পাত্রী খোঁজা নয়, বর-কনের পোশাক, বিয়ের আংটি, অনুষ্ঠান আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা, অতিথি আপ্যায়ন এমনকি দাওয়াতের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে ব্যবহার করছেন সর্বাধুনিক থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে তৈরি পোশাক ও টুপি। প্রযুক্তির সাহায্যে এসব পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রিয়জনের জন্য শুভেচ্ছাবার্তা। বর-কনে পরস্পর আবেগ বিনিময়কালে বিশেষ পোশাকের সাহায্যে ব্যক্তিগত বার্তা বিনিময় করতে পারেন, এমন প্রযুক্তিও এসে গেছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বিয়ে ও বাগদানের আংটি, কেক ইত্যাদিতেও।
আংটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন প্রযুক্তি, যা প্রতিবছর বিবাহবার্ষিকী বা অন্য কোনো স্মরণীয় দিনের কথা আগের দিন মনে করিয়ে দেবে। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও থাকছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিয়ের নিমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে মুঠোফোন, ফেসবুক ও সফটওয়্যার প্রযক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। অনুষ্ঠানের তারিখ ও সময় সম্পর্কে অতিথিদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার কাজটি এখন প্রযুক্তিই করবে। এ বিষয়ে মেরি বিডি ডটকমের প্রতিনিধি রবিন জানান, আমরা অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি। এই কম সময়ের ভিতরে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই তাদের ডাটা এন্ট্রি করছে। আশা করি ভবিষ্যতে এই সিস্টেমটা অনেক জনপ্রিয় হবে। বরবধূ ডটকমের মঞ্জুরুল করিম বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিনই অনেকে ফোন দিচ্ছে। আমরা পাত্র-পাত্রীদের ডাটাগুলো আমাদের সাইটে রাখার ব্যবস্থা করে দেই। যেখানে পাত্র-পাত্রীদের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্মসহ যাবতীয় তথ্য দেখার সুযোগ করে দেই। শুধু যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি লুুকিয়ে রাখি। তখন পাত্র-পাত্রী যোগাযোগের জন্য আমাদের সাহায্য নিতে হয়। আমরা সেটি করে দেই। তবে আমাদের সাইটে এই তথ্যগুলো রাখার জন্য মাসভিত্তিক একটা চার্জ নিই। আর এই সিস্টেমের কারণে ট্রাডিশনাল পদ্ধতির ঘটকদের কোনো প্রয়োজন হয় না।
উৎসঃ মানব জমিন
পাঠকের মতামত